ইয়াছিন আলী ইমন
কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামে ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়েছেন উলিপুরে তিস্তাপাড়ের মানুষ। গত তিন দিনে ভাঙনের তোড়ে তিন গ্রামের মানুষ হারিয়েছেন আড়াই শতাধিক ঘরবাড়ি।
ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, দুটি মসজিদ, একটি মন্দির, ঈদগাহ মাঠ, বজরা পশ্চিমপাড়া দাখিল মাদ্রাসা, পুরাতন বজরা বাজার ও একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙন কবলিতরা আশ্রয় নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে।খোলা জায়গায় দিন রাত কাটাচ্ছে মানুষ। উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার জানান, এক মাস যাবৎ তিস্তার ভাঙনের মুখে পড়েছে বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম কালপানি বজরা, ও সাতালস্কর গ্রাম। উত্তরে জজমিয়ার বাড়ি থেকে দক্ষিণে রোস্তম মৌলভীর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় এ ভাঙন শুরু হয়েছে খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই নিয়েছে ভাঙন কবলিত পরিবার গুলো।
তিনি আরও জানান, এরমধ্যে তিনদিন ধরে হঠাৎ করে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ভাঙনের তীব্রতা এমনি ভয়াবহ ছিল যে- একরাতের মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক ও ৩০-৪০টি বাড়ি মুহূর্তের মধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।ভাঙনের মুখে পড়া বজরা পশ্চিম পাড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মৌলভী রেফাকাত হোসেন বলেন,প্রায় ২০ বছর ধরে সুন্দরভাবে মাদ্রাসাটি পরিচালনা করছিলাম। কিন্তু সোমবার থেকে হঠাৎ করে তিস্তার ভয়াবহ ভাঙনে মাদ্রাসার অর্ধেক নদীতে চলে গেছে। এখন বাকিটা ভেঙে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।এদিকে উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা ভাঙন কবলিতদের পাশে দাঁড়ায়নি বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ভয়াবহ এই ভাঙনের খবর পেয়েও উপজেলা প্রশাসন থেকে কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। খোলা প্রান্তরে মানবেতরভাবে রয়েছেন ভাঙন কবলিতদের অনেকেই।ভাঙনে বিলীন বাড়ির অবশিষ্টাংশ সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ভাঙনে বিলীন বাড়ির অবশিষ্টাংশ সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টাচোখের পানি মুছতে মুছতে কালপানি বজরা গ্রামের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক (৬৫) বলেন, “তিনদিন থাকি এটে (খোলা মাঠে) পড়ি আছি। গরিব মানুষ জায়গা নাই-কোটে যাই। আজকে বজরা বাজারের বাসিন্দা দূর সম্পর্কের জেঠতো ভাই টিটু মিয়া তার খুলিত (আঙিনায়) ঘর তোলার অনুমতি দিছে। দেখি ওটে যায়া আপাতত উঠি, তারপর মাবুদ দেখপে।”
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার বলেন, ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দ্রুততম সময়ে ভাঙন কবলিতদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। তালিকা পেলেই সহযোগিতা শুরু করা হবে।
প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে ভাঙছে তিস্তার পাড় প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে ভাঙছে তিস্তার পাড়
তিনি আরও বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে আমরা ভাঙনের বিষয়গুলো আপডেট করেছি। বাজেট না থাকায় তারা মুভমেন্ট করতে পারছে না বলে জানিয়েছে। আর খোলা আকাশের নিচে কেউ থাকলে সেটা আমার নজরে আসেনি। আমি এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “গ্রামগুলোর উজানে নদী শাসনের ব্যবস্থা নেওয়ায় এখানে হঠাৎ করে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”