বিপ্লব সাহা খুলনা ব্যুরো চীফ :
দেশের নদী ও খাল রক্ষার্থে সরকার ঘোষিত খাল পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম দেশজুড়ে অব্যাহত থাকলেও স্থানীয় প্রভাবশালী ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের পেশী শক্তির কাছে প্রশাসন হার মানতে বাধ্য হচ্ছে।
তারই প্রমাণ স্বরূপ খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানাধীন ওরাবুনিয়া বিলের মধুমারী ও বিষের খালের অবৈধ স্হাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে আজ শনিবার উপজেলা কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ ।
সরকারিভাবে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী খাল পুনরুদ্ধার এর জন্য উল্লেখিত এলাকার খাল তিনটিকে অবৈধ দখলমুক্ত করতে গেলে গ্রামের লোকজন নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে এলাকার প্রভাবশালী কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাদের তোপের মুখে পড়ে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করে ঘটনাস্থল ছেড়ে অভিযান পরিচালক কর্মকর্তাগণ চলে আসতে বাধ্য হয়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায় আটলিয়া ও মাগুরাঘোনা ইউনিয়নভুক্ত ওড়াবুনিয়া মধুমারী ও বিষের খাল নামক দুটি খালের শনিবার ছিল অবৈধ দখল উচ্ছেদ এর পূর্ব নির্ধারিত দিন।
এ লক্ষ্যে গত দু’দিন যাবৎ এলাকায় মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হয়। এতে ব্যাপক সাড়া দিয়ে এলাকার দুই শতাধিক কৃষক স্বেচ্ছায় উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য অবস্থান করতে থাকেন। তারা সকাল থেকে মাগুরাঘোনা করিম বক্স এর মোড়ে অবস্থান নেয়। সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলা প্রশাসনের অভিযানিক দলটি সেখানে পৌঁছায়। তবে অভিযানের শুরুতেই কতিপয় নেতার বাধার মুখে পড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন পূর্ব নির্ধারিত দিন মোতাবেক মধুমারী ও বিষের খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানে আসি। কিন্তু অবৈধ দখলদারদের পক্ষে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা অভিযান পরিচালনা না করতে অনুরোধ করেন। সে কারণে তাদেরকে তিন সপ্তাহ অর্থাৎ আগামী অক্টোবর মাসের ১ তারিখ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। এর ভেতরে সার্ভেয়ার দ্বারা খালের সীমানা নির্ধারণ করা হবে। নির্ধারিত দিন পার হলে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ সময়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক সার্ভেয়ার মিরাজ হোসেনসহ থানা পুলিশ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য মধুমারী ও বিষের খাল দুটি দীর্ঘদিন ধরে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধভাবে ভেরি বাধ ও নেট পাটা দিয়ে মাছ চাষ করেছেন।
যার কারণে বিলের পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে ওই বিলে অন্তত দুই হাজার একর ফসলি জমি রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবহার ও শুষ্ক মৌসুমে ধান ও মাছ চাষ আবাদের জন্য খাল দুটি গুরুত্ব অপরিসীম।
কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে মাগুরাঘোনার মোঃ মতিয়ার রহমান সরদার দক্ষিণ চুকনগর গ্রামের আলতাফ হোসেন শেখ চাকুন্দিয়া গ্রামের আলমগীর শেখ নরনীয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম শেখ মালতিয়া গ্রামের জব্বার মল্লিক ও আব্দুল হালিম মোড়ল-সহ কতিপয় জমির মালিক তাদের জমির পাশ দিয়ে প্রবাহিত খাল দুটির বিভিন্ন অংশ অবৈধভাবে ভেরি বাদ দিয়ে ঘের তৈরি করে পাটা দিয়ে মাছ চাষ করছেন। এসব কারণে খাল দিয়ে পানি সরবরাহের বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে বিলের মৎস্য ঘের তলিয়ে যাওয়া সহ ধানের চাষ ব্যাহত হচ্ছে।
অপরদিকে মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের বেতাগ্রাম ঘোষপাড়া কাঞ্চনপুর হোগলাডাংগা মাগুরাঘোনা গ্রাম সহ পার্শ্ববর্তী তালা উপজেলার কয়েকটি গ্রামের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ হলো খাল দুটিতে বাধ থাকায় পানি বের হতে না পারায় এলাকা প্লাবিত হয়ে আসছে। যার কারণে গত এপ্রিল মাস থেকে এলাকায় অন্তত দুই শতাধিক ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ লিখিতভাবে একাধিকবার উপজেলা প্রশাসনের কাছে খাল দুটির অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে পানি প্রবাহ পথ সুগম করার ব্যাপারে দাবি জানিয়ে আসছেন।