বানের পানির ন্যায় ধেয়ে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নাভিশ্বাস উঠছে নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষদের!!

বিপ্লব সাহা খুলনা ব্যুরো চীফ :

প্রতিটা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বেসামাল। নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ নিম্ন মধ্যম আয়ের মানুষদের।
আয়ের তুলনায় খরচ দ্বিগুণ।
নুন আনতে পান্তা ফুরানর উপক্রম। কি খাব আর সংসার পরিজন ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত কি। নানান দুশ্চিন্তায় বুকের ভেতর যন্ত্রণার অন্ত নাই।
রাত হলে চোখে ঘুম আসে না। সকাল হলেই ছুটবে খরচের ঘোড়া। প্রতিটা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বাড়তে বাড়তে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ঊর্ধ্বে। সেদিকে লক্ষ নেই দেশে কোন আমলাদের। একমাত্র কাঁচামরিচ ছাড়া বাজারে সবকিছুর দাম আগুন বরাবর। পটলের ভরা মৌসুম থাকা সত্বেও কেজি হাতি আছে ৬০ টাকা কড়লা ১০০ টাকা আলু কেজি ৪০ টাকা ভেন্ডি কেজি ৬০ টাকা যে কোন প্রকারের শাক ৫০ টাকা কেজি দরে নিচে নাই। গরীবের সাধ্য সাধের মাংস বয়লার মুরগির কেজি ডাবল সেঞ্চুরিতে রেকর্ড গড়েছে। বর্তমানের ডিমের হালি ৪৮ টাকা। সবচেয়ে নিম্ন শ্রেণীর মাছের গায়ে হাত দিতে হলে কেজিপ্রতি গুনতে হচ্ছে ৫০০ টাকা।

মাত্র কয়দিন আগে খবরের কাগজ গুলোতে ইলিশ মাছের কথা উল্লেখ ছিল সাগরের জেলেরা মাছের ভারে জাল তুলতে পারছে না। মাইকিং করে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ।
অথচ বাজারে তার উল্টো চিত্র। সাধারণত কেজিতে ৬ টা সাইজের ইলিশের কেজি ৬০০ টাকা মাঝারি সাইজের ইলিশ কেজি ৮০০ টাকা বড় সাইজের ইলিশের দাম শুনতে ভয় করে। ইলিশ এখন সোনার হরিণ। কেজি তো দূরের কথা ১০০ গ্রাম কিনে খাওয়ার সামর্থ্য আমাদের মতো গরিব মানুষদের দুঃসাধ্য ব্যাপার।

বললেন খুলনা নগরীর মিস্ত্রীপাড়া বাজারের ক্রেতা আকবর আলি। পাশে দাঁড়ানো লিয়াকৎ মিয়া একজন শপিংমলের কাপড়ের দোকানের কর্মচারী। তার মাসিক বেতন ১৪ হাজার টাকা একমাত্র সন্তান কলেজের ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার লেখাপড়ার প্রতি মাসে খরচ ৫ হাজার টাকা বাসা ভাড়া ৫ হাজার টাকা অবশিষ্ট থাকে ৪ হাজার টাকা।
তা দিয়ে সারা মাসের খোরাক তো দূরের কথা ১০ দিন চলা মুশকিল। তারমধ্য হঠাৎ পরিবারের কোন সদস্য যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করা ছাড়া কোনো উপায় নাই। তরিতরকারির মাছ মাংসর দাম তো আগুন বরাবর।
তারপর আবার গত সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি চিনির দাম বেড়েছে ১০ টাকা বর্তমানে চিনি বাজারদর ৯০ টাকা কেজি। আটা ময়দা চাউল ডাউল সবকিছুর দাম এখন প্রতিদিন জোয়ারের গতিতে ধেয়ে বাড়ছে।
শুকনা খাবারের কথা বলা বাহুল্য কারণ গত ১৫ দিন আগে এক পাউন্ড কেক কিনতে লেগেছিল ৯০ টাকা এখন তা ১২০টাকা।
এক প্যাকেট টোস্ট এক লাফে বেড়ে হয়েছে ৬৫ থেকে ৯৫ টাকা। বিস্কুটের কেজি ২৮০ থেকে ৩৪০ টাকা চানাচুর ২০০ গ্রাম এর প্যাকেট ৬৫ থেকে এখন তা ৮৫ টাকা গুনে দিয়ে কিনতে হচ্ছে।

গেল ৬ আগস্ট মধ্যরাত থেকে সরকারের নেতিবাচক সিদ্ধান্তে
এক লাফে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে এখন দেশের নিম্ন মধ্যম আয়ের মানুষদের গলায় শিঙি মাছের কাঁটা হয়ে বিঁধে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে।
তারই সুযোগ ধরে গত সপ্তাহে বিশ্ব বাজারে ভোজ্যতেলের দাম না বাড়লেও ডলারের দামের অজুহাতের বরাত দিয়ে সরকার বরাবর লিটার প্রতি ২০ টাকা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে দেশের ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সংস্থা।

অথচ গেল মাসের মন্ত্রিপরিষদ বলেছিল দেশের মানুষদের কথা বিবেচনা করে কিছুটা হলেও ভোজ্যতেলের দাম কমানো হবে।
কিন্তু সে ভাষ্য এখন দেশের জনগণের কাছে শিয়ালের আঙ্গুর ফলের স্বাদ নেওয়ার শামিল বলে আলোচনার ঝড় উঠেছে।
এদিকে খুলনা শহর ভিত্তিক সকল বাজার সরেজমিনে ঘুরে সকল তথ্য অনুসন্ধান এর কথা উত্তরে খুলনা খুলনা নাগরিক ফোরামের দায়িত্বরত নেতা বলেন আমাদের দেশ একটা মধ্যম আয়ের দেশে যদি প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্য লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকে তাহলে সাধারন মানুষদের আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে হিমশিম খাওয়া ছাড়া অন্ত থাকবে না।

আমি মধ্যম আয়ের দেশ উল্লেখ করলেও এখনো আমাদের দেশে দৈনন্দিন খেটেখাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা একেবারে কম না। আর এই শ্রেণীর মানুষদের মাসিক আয় ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে।
সেই ক্ষেত্রে শহরের মতন জায়গায় বাসা ভাড়া করে থাকতে হলে সেটা যত নিম্নশ্রেণির হোক না কেন তাতেও মাসে ৫ হাজার টাকা বাড়ির মালিককে গুনে দেওয়া লাগে।
সাথে রয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ সবকিছু হিসাব করলে সারা মাস চাল-ডালসহ অন্য সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য ১০ দিনের খাবার খরচের টাকা থাকে না। এতে করে মানসিক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে হত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষেরা।
যার কারণে অভাবের মাঝে পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিটা মহল্লায় চুরি-ছিনতাই এর মতন ঘটনা অহরহ ঘটছে বলে নগরীর একাধিক এলাকাবাসীর অভিযোগ।

এদিকে আবার খুলনা বাজার মনিটরিং সেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন আমরা সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি করে বাজারদর নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করলেও হচ্ছে না তার কোন ফলপ্রসূ সুষ্ঠু ব্যবস্থা।
তার কারণ হিসেবে কর্মকর্তাগণ ঝাড়ে কেশে বলেন যতদিন পর্যন্ত অসাধু সিন্ডিকেট মজুদ ব্যবসায়ীদের মাথার উপর দেশের আমলাতন্ত্রদের ছায়া থাকবে ততদিন এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে না।

কারণ আমরাও তো দেখছি একজন নিম্নআয়ের দরিদ্র মানুষের সংসারের সন্তানাদি নিয়ে কোনোরকম দিন চালাতে তাদের মুখে রক্তবর্ণের ছাপ পড়ছে। এই অবস্থার মধ্য কোন প্রতিকার আগামীদিনের আশার আলোর সন্ধান মিলছে না দেশের অতি দরিদ্র মানুষের মাঝে।
অথচ এদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম এর বিনিময় হচ্ছে দেশের উন্নয়নের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন। আর এরাই যদি থাকে অর্থাভাবে ক্ষুধার্ত অনাহারী তাহলে দেশের আগামীর সম্ভাবনার আলো কোথায়।
দেশের সাধারন অতি দরিদ্র মানুষদের প্রশ্ন এখন দেশের আমলাদের কাছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *