মেয়ে সন্তান হওয়াই পুকুরে ফেলে হত্যা করলো পাষান্ড বাবা।

আব্দুল গাফফার
শেরপুর বগুড়া প্রতিনিধি।

প্রথমটি মেয়ে সন্তান। এরপর প্রত্যাশা ছিল ছেলের। কিন্তু আবারও মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। এনিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকতো। আর এই পারিবারিক কলহের জেরে জাকির হোসেন নামের এক পাষন্ড পিতা তার চৌদ্দ মাস বয়সী ফুটফুটে ঘুমন্ত শিশুটিকে পুকুরে ফেলে হত্যা করেছে। মধ্যযুগীয় এই অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের উঁচুলবাড়িয়া গ্রামে। সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দিনগত গভীর রাতে কোনো এক সময় ঘুমন্ত শিশুটিকে তুলে নিয়ে গিয়ে পুকুরের পানিতে ছুড়ে ফেলে জাকির হোসেন। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওই পুকুর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয় এলাকাবাসী। পরে জাকির হোসেনকে (৪৫) আটক করা হয়। তিনি উঁচুলবাড়িয়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে নিহত শিশুটির লাশ উদ্ধার করেন। সেইসঙ্গে ঘাতক পাষাণ্ড বাবা জাকিরকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যান। নিহত শিশুটির নাম রাখা হয়েছিল মোছা. হুমায়রা খাতুন। স্থানীয় এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্র জানান, বিগত সাত বছর আগে জাকিরের সঙ্গে পাশ্ববর্তী নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের নামা সিংড়াপাড়া গ্রামের রমজান আলীর মেয়ে রাবেয়া খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ভালই চলছিল তাদের সংসার। এক বছরের মাথায় একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। তার নাম মোছাঃ জান্নাতি খাতুন। বর্তমানে বয়স ছয় বছর। এরপর বাবা জাকিরের প্রত্যাশা ছিল ছেলে সন্তানের। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তানও মেয়ে হয়। এতে ক্ষুব্ধ হন তিনি। এই বিষয়টি নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য তৈরী হয়। এই কারণে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। এরই জেরে সোমবার সন্ধ্যায় তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে রাতের কোনো এক সময় ঘুমন্ত শিশুটিকে পুুকুরে ফেলে দেন পাষান্ড বাবা। নিহত শিশুটির মা রাবেয়া খাতুন বলেন, মধ্যরাতে ঘুম থেকে জেগে দেখি আমার মেয়ে হুমায়রা খাটের ওপর নেই। পরে পরিবারের সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে বিষয়টি জানাই। সেইসঙ্গে আমার বোন-দুলা ভাইকে খবর দেই। স্থানীয় প্রতিবেশি লোকজনকেও জানানো হয়। এরপর সবাই এসে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। সন্তানকে না পেয়ে একাধিকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। একপর্যায়ে আমার স্বামীকে চাপ দেন তারা। পরে শিশু মেয়েটিকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন পাষান্ড স্বামী। এসব বলে বিলাপ করতে থাকেন নিহতের মা বাবেয়া খাতুন। জাকিরের ভায়রা সাইফুল ইসলাম বলেন, জাকিরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ভোররাতে ওই পুকুরে নেমে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টা চালানো হয়। পরে শিশুটিকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর জাকিরকে আটক করে থানায় খবর দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার এ প্রসঙ্গে বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে ঘটনাটির খবর পেয়েই পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসানকে সর্ঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তাঁকে নির্দেশনা দিয়েছি। এ বিষয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এছাড়া ঘুমন্ত শিশুটিকে পুকুরে ফেলে হত্যার কথা স্বীকার করায় ঘাতক বাবা জাকিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে অভিযুক্ত পাষন্ড বাবা জাকিরের বক্তব্য জানতে চাইলে শিশু মেয়েটিতে পুকুরে ছুড়ে ফেলে হত্যার কথা স্বীকার করেন। হঠাৎ মাথা গরম হয়ে যাওয়ায় এমন কাজটি করেছেন। ঘটনার পর এখন নিজের ভুল বুঝতে পারছি। এজন্য আমি অনুতপ্ত। সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তিনি আরও বলেন, আমার মতো এ ধরণের কাজ যেন আর কেউ না করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *