আব্দুল গাফফার
শেরপুর বগুড়া প্রতিনিধি।
বগুড়া শেরপুরে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মর্তুজা কাওসার অভি (৩৮) খুনের ঘটনায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের আট নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিহত আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী খাদিজা আক্তার লিমা বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। নিহত অভি শেরপুর পৌর এলাকার খন্দকার পাড়ার মৃত হোসাইন কাওসার ফুয়াদের ছেলে। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। দায়েরকৃত মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- পৌর কমিটির সদস্য শহরের খন্দকারপাড়ার সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম রাঞ্জুর ছেলে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ হিমেল (৩২), যুবলীগকর্মী শহরের পূর্বদত্তপাড়া এলাকার গোলাম মোস্তফা ড্রাইভারের ছেলে সোহাগ হোসেন (৩০) ও শহরের নয়াপাড়া এলাকার জাহিদ হোসেন (২৬), উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শহরের নয়াপাড়া এলাকার জিল্লুর রহমানের ছেলে আরিফুর রহমান শুভ (৩৫), মির্জাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শহরের নয়াপাড়া (কোর্টপাড়া) এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩২), শেরপুর পৌর শাখা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক (রুহান-কারিমুল কমিটি) মো. রকি (২৭), শেরপুর পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক উপজেলার শেরুয়া গ্রামের পাকছার আলীর ছেলে রিয়াজুল ইসলাম বাপ্পি (৩৭) এবং ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক শহরের উলিপুর পাড়ার আলতাব হোসেনের ছেলে এনামুল মুসলিমিন সোহাগ (৩৫)। এ ছাড়াও আরো ৮-৯ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়, যাদের মধ্যে হিমেল, সোহাগ ও জাহিদকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলা সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা অভির সঙ্গে ঠিকাদারি ও হাটের ইজারা ব্যবসা নিয়ে মামলায় অভিযুক্তদের বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের রেশ ধরে বিগত ২৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) বিকালে অভি প্রাইভেট কার ধোয়ার জন্য উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন মোজাহিদ মোটর গ্যারেজে যান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ হিমেল অভিকে ডেকে গ্যারেজের দক্ষিণ পাশের ফাঁকা বাগানে নিয়ে যান। এ সময় শরীফ নামের যুবক সাধারণ লোকজনকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যান। এই সুযোগে আগে থেকেই ওত পেতে থাকা মামলার অন্য অভিযুক্তরা এসে অভির সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। প্রাণ বাঁচাতে বাগানের ভেতর দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন অভি। পরে রাম দা, চাপাতি ও চায়নিজ কুড়াল দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যান অভিযুক্তরা। এরপর আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে (শজিমেক) নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অভিকে মৃত ঘোষণা করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে শেরপুর শহীদিয়া আলীয়া মাদরাসা মাঠে নিহতের নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। দলীয় সূত্র জানায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা অভি ও যুবলীগ নেতা সোহাগের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এই দ্বন্দ্বের জেরে সম্প্রতি অভি যুবলীগ নেতা সোহাগ ওরফে চাকু সোহাগকে মারপিট ও ছুরিকাঘাত করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দলীয় বিভাজন তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে এ ঘটনার জেরেই ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে বলে সূত্র দাবি করেন। মামলার বাদী খাদিজা আক্তার লিমা অভিযোগ করে জানান, আমার স্বামীর হত্যাকারীরা খুবই প্রভাবশালী। ঘটনার পর থেকেই তাদের নামে মামলা না করার জন্য নানাভাবে আমাকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছিল। আমি সেসব বাধা উপেক্ষা করে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমার স্বামীর খুনিরা যত বড়ই প্রভাবশালী হোক না কেন, আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। ন্যায়বিচার পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সহযোগিতার জন্য আকুল আবেদন করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খোন্দকার বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় মামলা নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মামলার এজাহার নামীয় অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি মামলার অন্য অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে রয়েছে। তাই কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি এই মামলায় হয়রানির শিকার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শুধু সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ও পরিকল্পনাকারী তাদেরকেই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।