শুরু হল শারদীয় উৎসব

মোঃ মাসুদ আলম,ব্যুরো চীফ

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আজ (১ অক্টোবর) ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব। শনিবার সায়াংকালে দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়।

‘দুর্গা’ শব্দের অর্থ হলো ব্যুহ বা আবদ্ধ স্থান। যা কিছু দুঃখ কষ্ট মানুষকে আবদ্ধ করে, যেমন- ভয়, দুঃখ, শোক, জ্বালা, যন্ত্রণা এসব থেকে তিনি ভক্তকে রক্ষা করেন। শাস্ত্রকাররা দুর্গার নামের অন্য একটি অর্থ করেছেন। দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাঁকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন।

হিন্দু পূরাণ মতে, দুর্গাপূজার সঠিক সময় হলো বসন্তকাল কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি বসন্তকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেন। সেই থেকে অকাল বোধন হওয়া সত্ত্বেও শরৎকালে দুর্গাপূজা প্রচলিত হয়ে যায়।

শান্ত কুমার মজুমদার, সভাপতি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, গোদাগাড়ী উপজেলা গণমাধ্যমকে জানান, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার গজে (হাতি) চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যালোকে (পৃথিবী) আসবেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঝড় বৃষ্টি হবে, এতে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে, মর্ত্য থেকে কৈলাশে (স্বর্গে) যাবেন নৌকায় চড়ে। যার ফলে জগতের কল্যাণ সাধিত হবে।

ইতিমধ্যেই পূজাকে আনন্দমুখর করতে দেশজুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতির শেষ হয়েছে। সারাদেশে বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাক-ঢোল, কাঁসা এবং শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মন্ডপ।

রামকৃষ্ণ মিশনের নির্ঘণ্টে বলা হয়েছে,আজ শনিবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে সায়াংকালে কল্পারম্ভ, বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হবে। এদিন সকাল থেকেই মন্ডপগুলো চন্ডিপাঠে মুখরিত হয়।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন রবিবার মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে। সোমবার মহাঅষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে বিকেল ৪টা ৪৪ মিনিটে আর সমাপন বিকেল ৫টা ৩২ মিনিটে।

নবমী পূজা শুরু হবে মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে, পুস্পাঞ্জলি সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। পরদিন বুধবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে দশমী পূজা আরম্ভ, পুস্পাঞ্জলি সকাল ৮টায় এবং পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের মধ্যে। সন্ধ্যা-আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের।

গোদাগাড়ী পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক শান্ত কৃষ্ণ মজুমদার জানান, সারাদেশে এ বছর ৩২ হাজার ১৬৯টি মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হচ্ছে। গত বছর সারাদেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি। সে তুলনায় এবার মন্ডপের সংখ্যা বেড়েছে ৫১টি। গোদাগাড়ীতে এবার ৩৯ টি মন্ডপে পূজা উদযাপন হচ্ছে।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে উপজেলার প্রতিটি পূজামন্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি প্রতিটি মন্ডপে স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

গোদাগাড়ী উপজেলা কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত শ্রীমন্তপুর কেন্দ্রীয় মন্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি ও প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, ‘গত বছরের ঘটনার প্রেক্ষাপটে এ বছর সরকার চাচ্ছে, কোনো অবস্থাতেই যেন কোনো অঘটন না ঘটে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো গত বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি সক্রিয়। আমাদের ৩২ হাজার ১৬৯টি মন্দিরের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আমরা এ বছর প্রত্যেক মন্দিরে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেছি,যারা প্রশাসনের পাশাপাশি সার্বক্ষনিক এমনকি তারা রাতেও পাহারা দেবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *