বিপ্লব সাহা খুলনা ব্যুরো চীফ :
হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রীয় মতে পঞ্জিকার তিথি লগ্ন অনুসারে সময় নির্ঘন্ট অনুযায়ী আজ ১ অক্টোবর শনিবার সায়ংকালে বোধন হয়েছে মণ্ডপগুলোতে চিন্ময়ী আনন্দরুপিণীর।
ক্ষণে ক্ষণে উলুর ধ্বনি শঙ্খ কাসর আর ঢাকের বাদ্য দিয়ে জানান দিচ্ছে ঠাকুর ঘরের উদ্ভাসিত মৃন্ময়ী রুপ প্রতিমা বরণ চলছে। শুরু হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের আজ শনিবার পহেলা অক্টোবর মহাষষ্ঠী। এ দিন রাত ৯ টা ৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ড থেকে মহাষষ্ঠী। আগামীকাল মহাসপ্তমী।
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এই পূজা ঐতিহ্যবাহী বারোয়ারি বা কমিউনিটি পূজা হিসেবে হিন্দুদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
হিন্দু বিশ্বাসে ধূপের ধোঁয়া এর শনিবার সায়ংকালে ঢাকঢোল কাশর মন্দিরার চারদিক কাঁপানো নিনাদ আর পুরোহিত দের জলদ কন্ঠে যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ মন্ত্রোচ্চারণের ভেতর দূর কৈলাস ছেড়ে দেবি পিতৃগৃহে এসেছেন গজে আগমন অর্থাৎ হাতিতে এসেছেন ফলো গজে জলদেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা অর্থাৎ মায়ের আগমনে চতুর্দিকে শস্য সবুজ শ্যামল পরিপূর্ণ ফসল ফলনের সম্ভাবনার বাতায়ন উন্মোচন করে দিচ্ছেন মা দেবী দুর্গা।
দূর্গা উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
পাশাপাশি খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার কেসিসি মেয়র আলহাজ্ব মোহাম্মদ তালুকদার আব্দুল খালেক ও পুলিশ সুপার মোঃ মাহবুব হাসান ও পুলিশ কমিশনারসহ খুলনার র্্যাব ৬ এর সিও মোঃ মোস্তাক আহমেদ খুলনা জেলার সকল পূজামণ্ডপ গুলোতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা কর্তৃক কঠোর নজরদারির মাধ্যমে সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেরকে বলেছেন কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই যেন হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান দূর্গা পূজা আয়োজন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। এবং সর্বদা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার হাঙ্গামা প্রতিহত করার জন্য সক্রিয় ভাবে প্রস্তুত থাকার কথা বলেছেন।
সে ক্ষেত্রে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার নির্দেশ দেন সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেরকে।
আজ মহা ষষ্ঠীর দিন থেকেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দলবেঁধে পূজা দেখতে আসছেন। বিকাল থেকেই পূজামণ্ডপগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে।
বাহারি পোশাকের নিজেদের সাজিয়ে রাঙ্গিয়ে উৎসব আনন্দে মেতে উঠেছে শিশু-কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীরা। এবছর খুলনা জেলায় ১৩৩ টি পূজা মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবছর খুলনা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ বিভিন্ন দুর্গাপূজা মন্দিরে অনুদান হিসেবেনগদ অর্থ প্রদান করেছে।
খুলনা জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সকল কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন মন্দির প্রদর্শন করে নগদ অর্থ অনুদান দিয়েছেন খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
গত দুই বছর বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে সরকারি অনেক বিধিনিষেধ থাকায় হিন্দু ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা তেমন জাঁকজমকভাবে করতে না পারলেও
সীমিত পরিসরে পূজা উদযাপন পালন করেছিল।
এছাড়া আরতী প্রতিযোগিতা বন্ধ এবং মেলা বিজয় দশমীর দিন শোভাযাত্রা পরিহার করে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার নির্দেশ ছিল বলে জানানো হয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে।
তবে হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষেরা বলছে মা দুর্গা দুর্গতিনাশিনী মায়ের অশেষ কৃপায় এবছর কোন দুর্যোগ না থাকার কারণে সকল মায়ের ভক্তরা আত্মার বন্ধনে মিলবন্ধন হয়ে আনন্দঘন মুহূর্তের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গা উৎসবে মেতে উঠেছে সকল পূজামণ্ডপের দর্শনার্থী ভক্তরা।
আজ পূজার প্রথম দিন মহাষষ্ঠী হওয়াতে পূজামণ্ডপ গুলোতে দর্শনার্থীদের নজরে পড়ার মতন ভিড় না জমলেও আগামীকাল মহা সপ্তমী তিথি থেকেই শুরু হবে মহাসমারোহে সাথে প্রতিটা পূজামণ্ডপে লক্ষ করা যাবে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়।