বিপ্লব সাহা খুলনা ব্যুরো চীফ :
খুলনা জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিরোধী দলীয় প্রতিপক্ষ না থাকলেও নিজ দলীয় তিনজন প্রার্থী কঠোর অবস্থানে থেকে লড়ে যাচ্ছে ভোটযুদ্ধে।
এতে সাধারন জনগন ভোটার না হলে ও নানান গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে নগরীর প্রত্যেকটা অলিগলি এবং চায়ের দোকান আড্ডাস্থলে সব ধরনের মানুষের মধ্যে চলছে আলোচনার ঝড়।
ক্ষমতাশীল দলের তিনজন নির্বাচনের প্রতিপক্ষ অবস্থানে কঠোরভাবে থাকাতে কেউ কাউকে ছাড় দিতে চাচ্ছেনা। প্রচার-প্রচারণায় সমালোচনার ঝড় তুলছে একে অপরের বিরুদ্ধে।
তবে মৌলিক গণতন্ত্র পদ্ধতিতে খুলনা জেলা পরিষদের নির্বাচন ১৭ অক্টোবর। বিরোধীদলের বিরোধিতা না থাকলেও নিজেদের মধ্যে বিরোধ প্রবল। এতে করে সরকার বিরোধী দলগুলো আরো আলোচনা সমালোচনা ও নিন্দায় মেতে উঠেছে।
খুলনা জেলা পরিষদ নির্বাচনের
তিন জন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনীতিতে বিশ্বাসী হলেও কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না।
ফলাফল কি হবে চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন না প্রবর্তন।
এ নিয়েও চলছে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর ত্রিমুখী তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ। এ মাসে খুলনার রাজনীতিতে এটাই অন্যতম আলোচ্য বিষয়।
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর জেলা পরিষদ নির্বাচন সমাগত বাকি মাত্র ১১ দিন। আলোচিত ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। জেলার ৯৭৮ জন প্রতিনিধি ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ৯ টি কেন্দ্রে। প্রার্থীরা নানানভাবে প্রচারণায় নেমেছেন সর্বজনীন ভোট না হলে ও প্রতিক অঙ্কিত পোস্টারে ছড়াছড়ি।
এই জেলা পরিষদ নির্বাচনে মূলত চারটি বিষয়ে আলোচনা হিসেবে উঠে এসেছে। প্রথম নগরীর অভিজাত পরিবারের আশীর্বাদ। অর্থাৎ খুলনা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের মুল কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিগণিত হয় শেখবাড়ী কে আর এই কেন্দ্রকেই প্রথম টার্গেট হিসেবে ধরে রেখেছে তিন প্রার্থী। কিভাবে কোন কৌশলে কেমন করে এই কেন্দ্রস্থল কে ম্যানেজ করে নিয়ে ভোটে অগ্রসর হতে পারবে সে বিষয়ে ব্যতিব্যস্ত প্রার্থীরা।
দ্বিতীয়তঃ আন্দোলনরত বিরোধী দলের সমর্থন স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতি তাদের মনোভাব আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের সাথে ও গণসংযোগ চালিয়ে যেতে কার্পণ্যতা ও সংকোচ করছে না।
তৃতীয়তঃ গেল ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের প্রতিশোধের আঙ্গুল তোলা চতুর্থ শাসকদলের জেলা ও নগর শাখা অধিকাংশের মনোভাব পর্যালোচনায় মধ্য দিয়ে তাদেরকে আকৃষ্ট করা হচ্ছে ।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন শাসক দল সমর্থিত শেখ হারুনুর রশিদ। তিনি খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। প্রথম দফায় জেলা পরিষদের প্রশাসক পাঁচ বছর আগে নির্বাচিত চেয়ারম্যান। সর্বশেষ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অজয় সরকার। সেক্ষেত্রেও দলীয় সূত্রে জানা যায়
সে সময় ও এই জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়েই নিজস্ব দলের মধ্যে মত বিরোধের একটা বহিঃপ্রকাশ উঠে আসে।
তবে এবারের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রয়াত রাজনীতিবিদ এসএম মোস্তফা রশিদী সুজার কনিষ্ঠ ভাই এস এম মর্তুজা রশিদী দারা তিনি ৮০ দশকের খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। তিনি খুলনা সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয় ছাত্রসংসদ এর ছাত্র লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত ভিপি। পাশাপাশি খুলনা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি। বড় পরিচয় জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ এসএম মোস্তফা রশিদী সুজার অনুজ।
অপর প্রার্থী হলেন সদ্য নির্বাচিত বিএমএর সভাপতি। এবং খুলনার একাধিকবার সভাপতি স্বাচিপের স্থানীয় কর্ণধর ডাক্তার শেখ বাহারুল আলম। সে আওয়ামী লীগের সাবেক জেলা কমিটির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক। শৃঙ্খলা বিরোধী ও নৈতিকতা স্খলন এর অপরাধে তিনি এখন দলের বহিস্কৃত সদস্য।
দলীয় সূত্র থেকে জানা যায় সোমবার ৩ অক্টোবর খুলনা ক্লাব অনুষ্ঠিত জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভার পর নতুন মোড় নিয়েছে পরিস্থিতি। সভায় মূখ্য আলোচক হিসেবে তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে ভোটাররা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারা অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। সভাস্থলে প্রথম কাতারের দিকে সুসজ্জিত আসনে উপবিষ্ট ১৫ জন ইউপি সদস্যকে স্থান পরিবর্তনের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়।
এবং নিম্নমানের প্লাস্টিকের চেয়ারে বসার স্থান নির্ধারণ করায় ইউপি সদস্যদের আত্মমর্যাদায় হানি হয়। এছাড়া অনেকেই দুপুরের খাবার পাননি পাশাপাশি কেসিসির ৩০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসএম মোস্তফা রশিদী রেজা এ সভায় বক্তৃতাকালে দলের স্বার্থে নিজের ভোট টি প্রকাশ্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে কেসিসির অন্যান্য কাউন্সিলরদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ৩০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর চেয়ারম্যান প্রার্থী মর্তুজা রশিদী দারার সহোদর। এসময় অভুক্ত ভোটারদের ক্ষুব্দ হওয়ার সুযোগটি নেন অপর দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী । তেরখাদা উপজেলার ক্ষুব্দ ভোটারদের একাংশের আবহনী ক্রীড়াচক্রের চশমা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা আপ্যায়ন করান।
সোমবার সভায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হারুনুর রশিদ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দলের ভোটারদের তাকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানান। পরে বিভিন্ন মত বিনিময় অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী মর্তুজা রশিদী দারা তার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বলে ভোটারদের আশ্বস্ত করেছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নির্বাচন জমে উঠেছে। তবুও যেন শাসক দলের ভেতর সন্দেহের জাল বিস্তার করছে।