গোদাগাড়ীর মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তদের ‘সিঁদুর উৎসব’

 

মোঃমাসুদ আলম ব্যুরো চীফ

রাজশাহী নগরীতে শারদীয় দুর্গোৎসবের দশমীতে দূর্গার বিদায়ের আগমুহুর্তে পূজা মণ্ডপ গুলোতে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা। সুন্দর ও মঙ্গলময় আগামীর প্রত্যাশার সঙ্গে জীবনকে রঙের মতো রঙিন করতে সকাল থেকে প্রতিটি পূজামণ্ডপে ছিল সিঁদুর উৎসব। একে অন্যকে লাল রঙের সিঁদুরে রাঙানোসহ ঢাক ঢোলের তালে আনন্দে ভাসছেন ভক্তরা।সিঁদুরময় এই আনন্দ উচ্ছ্বাসে শুধু নারীরাই নয়, পূজামণ্ডপগুলো তরুণ-তরুণীদেরও উপচে পড়া ভীড় দেখা গেছে।

বুধবার (৫ অক্টোবর) সকাল থেকে রাজশাহী নগরীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে শারদীয় দুর্গাপূজার মহাদশমীতে সিঁদুর খেলার আয়োজন লক্ষ্য করা যায়। বিদায়ক্ষণে দেবীর আরাধনা শেষে সন্ধ্যা থেকে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবছরের দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।

বিভিন্ন বয়সী নারীদের উপস্থিতি বর্ণিল উৎসবের রঙ ছড়িয়েছে সিঁদুর খেলা। নতুন সাজ আর সিঁদুরের আলতো ছোঁয়ায় গালে–মুখে লাল রঙের আবরণে অন্যরকম মূহুর্তে মেতে ওঠেন ভক্তরা। মনে হয় যেন তারা হারিয়ে গেছে অজানা এক কল্পনার জগতে। সবকিছু ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে নিজেদেরকে উপস্হাপন করেছে সহজ সাবলীল মনের একজন মাটির মানুষ হিসেবে। গানের তালে একটু হেলে দুলে উৎসবের আমেজ মন ছুঁয়ে যায়।

পূজামণ্ডপে আসা শীলা মজুমদার বলেন, এরকম দিনে সিঁদুরের ছোঁয়ায় বেশ ভালো লাগছে। সবার গালে-মুখে সিঁদুরে সিঁদুরে একাকার। এই দিনটার জন্য আমরা সবাই অপেক্ষায় থাকি। দশমীর আগমুহূর্তে আমাদের এই আনন্দ উচ্ছ্বাসে একটাই চাওয়া আগামীদিনগুলো যেন আরো রঙিন ও স্বপ্নময় হয়ে উঠে।

সবাই যখন সিঁদুর ছোঁয়ায় ব্যস্ত তখন নাচেগানে উচ্ছাস করা পুরুষদের দেখা যায় বেশ উজ্জীবিত। তাদের অনেকের গালে-মুখে সিঁদুরের ছোঁয়া। সিঁদুর খেলা দুর্গোৎসবের দশমীতে হয়ে থাকে। এটা ভক্তদের আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। কমবেশি সবাই এই দিনটাকে বেশ আনন্দের সাথে উপভোগ করে আসছে। সকালে শুরু হয়ে দুপুরের মধ্যে বেশির ভাগ পূজামণ্ডপে দেবী বিসর্জনের আগে উৎসবমুখর পরিবেশে এই সিঁদুর খেলা সম্পন্ন হয় থাকে বলে জানান ভক্তরা।

উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপে সিঁদুর উৎসব দেখা যায়। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সাথে নেচে-গেয়ে গানের তালে তালে একে অপরকে সিঁদুর মাখানোর মাধ্যমে বিসর্জনের দুঃখ ভুলে অনিন্দ্যসুন্দর আগামীর প্রত্যাশার মেতে উঠেন।

গোদাগাড়ী ভগবন্তপুর সর্বজনীন দূর্গা মন্দিরের সভাপতি পাপ্পু ভক্ত বলেন, বিজয়া দশমীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে অন্যরকম আবেগ ও মন খারাপ করা এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়। কারণ, দশমী মানেই দুর্গা মায়ের ফিরে যাওয়া। অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও একটি বছর। তবে বিসর্জনের আগমুহূর্তে সিঁদুর খেলায় রঙিন দিনের প্রত্যাশায় সবার মিলিত হওয়াটাও ভীষণ আনন্দের।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির গোদাগাড়ী উপজেলার সভাপতি,শান্ত কুমার মজুমদার  বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবার দুর্গোৎসব হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল পূজামণ্ডপ। দশমীর দিনে সিঁদুরের ছোঁয়ায় এই উৎসব আরো পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। আমরা ভীষণ আনন্দিত।এদিকে বুধবার সন্ধ্যার পর একযোগে পূজামণ্ডপগুলো থেকে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গোৎসবের দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত র‌্যাব, পুলিশ, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *