আজ দশমী পূজা ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ দুর্গা পূজো সম্পন্ন হয়েছে!!

 

বিপ্লব সাহা খুলনা ব্যুরো চীফ :

হিন্দু ধর্মের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দূর্গা উৎসব আজ প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটেছে শারদীয় দুর্গোৎসব।
মণ্ডপে মণ্ডপে মাকে সিঁদুর মিষ্টি আর ধান দূর্বা দিয়ে বিদায় জানিয়েছেন হিন্দু ধর্মীয় সধবা নারীরা।
যার কারণে সিঁদুর খেলায় মেতেছে মন্দিরের সকল ভক্তরা।
এই সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়েই হিন্দুশাস্ত্র প্রথা অনুযায়ী গৃহের মঙ্গলার্থে আর্থিক সুখ-সমৃদ্ধি বজায় থাকার জন্য কড়ি ও মুদ্রা যাত্রা করে রাখে।
ধর্মবিশ্বাসী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা।

গতকাল নবমী পূজার শেষ রাত থেকেই সকল ভক্তদের হৃদয়ে এক আত্ম বেদনাদায়ক মর্মাহত আশা নিরঞ্জন উপলব্ধি হতে থাকে।
কারণ গত পঞ্চমী তিথি থেকে মহামায়া দেবী দুর্গার পূজার আগমনী বার্তা শুরু হয় আনন্দঘন মুহূর্ত মধ্য দিয়ে। অবিরাম চলতে থাকে ষষ্ঠী সপ্তমী অষ্টমী নবমী আজ মহা বিজয় দশমী অর্থাৎ প্রাতঃ বেলায় পঞ্জিকার সময় নির্ঘন্ট অনুযায়ী দেবী দুর্গা দুর্গতিনাশিনী মৃন্ময়ী মা মহামায়া দেবী দর্পণ বিসর্জন এর মধ্য দিয়ে মর্তলোক ছেড়ে তার নিজস্ব আলয় কৈলাসের অভিমুখে শাস্ত্রীয় রীতি অনুযায়ী ফিরে গিয়েছেন কৈলাসে।

তবে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন এর লক্ষে মর্তলোকে এসে পৃথিবীর যত মহিষাসুর রুপি আসুরিক অসুরদের ধ্বংস করে ধর্ম প্রতিষ্ঠা
করে যান দুর্গা দুর্গতিনাশিনী।
এদিকে শাস্ত্রীয় বিধান অনুযায়ী দুর্গা মা এবার এসেছেন গজে অর্থাৎ হাতিতে চড়ে। যার লক্ষণ হিসেবে পৃথিবীতে অধিক শস্য ফসলের লক্ষণ দেখা দেবে এবং এবং মর্তে খাদ্যে অপরিপূর্ণ থাকবে।
মা কৈলাস গমন করেছে নৌকায় চড়ে তার ফলস্বরূপ মর্তে প্রভাবে দেখা দেবে জল বৃদ্ধি ও পাশাপাশি ফসল বৃদ্ধি পাবে।

সেই ক্ষেত্রে মাকে বিদায় লগ্নে সকল ভক্তরা উচ্চস্বরে একই বুলি উচ্চারিত করে মাকে জানান দিয়ে সমস্বরে বলে। আসছে বছর আবার এসো মা এই মর্তলোকে।

তথাপিও খুলনা নগরীর সব গুলো পূজামণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার জন্য নির্ধারিত ঘাঁট হিসেবে খুলনা জেলখানা ঘাট কে প্রস্তুত করেন খুলনা জেলা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খুলনা জেলা প্রশাসক খুলনা র্্যাব ৬ ও ডিবি পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে যথাসময়ে উৎসব উদ্দীপনার সাথে খুলনা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সকল কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মহামায়া দেবী কে বিসর্জন এর আয়োজন করা হয়েছে।

এবং প্রতিমা বিসর্জনের পূর্ব মুহূর্ত থেকে খুলনা জেলা পুলিশ কমিশনার এবং খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মামুন হাসান ও সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মমতাজুল ইসলাম উপস্থিত থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বিশেষ বিশেষ দিক পর্যালোচনা করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করার জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করে দিতেও কার্পণ্য তা করবে না বলে জানান হিন্দু সম্প্রদায়ের তথা সকল ধর্মের মানুষদের।

পাশাপাশি খুলনা জেলখানা ঘাটটি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার উপযুক্ত স্থান ও নিরাপত্তা বলয় হিসাবে বেছে নিয়েছেন নগরীর জেলখানা ঘাট। সেই ক্ষেত্রে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার ঘাটটি নগরীর সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ শামসুর রহমান স্বপন মিয়া তার নিজের উদ্যোগে জায়গাটি পরিষ্কার করে লাইট লাগিয়ে আলোকসজ্জা করে যাতে করে প্রতিমা বিসর্জন দিতে কোন প্রকারে সমস্যা না হয়
তার জন্য সকল ধরনের ব্যবস্থা তিনি করে দিয়েছেন।

পাশাপাশি প্রতিমা বিসর্জন ক্ষণে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে তার জন্য খুলনা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ কমিটিকে প্রশাসন কর্তৃক বলে দিয়েছিলেন গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া যাবেনা। যথাসম্ভব চেষ্টা করে রাত ৮ টার ভিতরে সকল প্রতিমা বিসর্জন কার্য সম্পন্ন করতে হবে।

সেই মোতাবেক খুলনা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে সময় নির্ধারণ করা হয় বিকাল ৫ টা ২২ মিনিট থেকে প্রতিমা নিরঞ্জন শুরু হবে। এবং রাত্র আটটা পর্যন্ত সেটা অবিরামভাবে চলবে।

তাই পূজা উদযাপন পরিষদ ও প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী প্রথম প্রতিমা সাহেবের কবর খানা রবীন্দ্রস্মৃতি দুর্গা মন্দিরের প্রতিমা নিরঞ্জন শুরু হয় বিকাল ৫ টা ২৬ মিনিটে।
এরপর পর্যায়ক্রমে নগরীর সকল মন্ডপের প্রতিমা গুলি ট্রাকে করে সারিবদ্ধ ভাবে এসে ঢাক ঢোল বাদ্য বাজনা ধুপ ধুনা এবং ভক্তদের সমবেত সহযোগিতায় এক এক করে সকল মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করা হয়েছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলেছে গত দুই বছরে বৈশ্বিক মহামারী করো না থাকার কারণে দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন বিধিনিষেধের আওতায় থাকার কারণে পূজার আয়োজন মহাসমারোহে সাথে এর না করতে পারার কারণে গেল দুই বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা আজকের দিনের ন্যয় এমন আনন্দঘন মুহূর্ত থেকে পিছিয়ে ছিল গেল দুই বছর।

তাই এবার পুজোর শুরু থেকেই প্রতিটা মণ্ডপে উপচে পড়া ভক্তদের ভিড় পরিলক্ষিত হয়েছে। এবং এ বছর প্রতিটি দর্শনার্থীদের ভিতরে উৎসব মুখর উদ্দীপনা দেখা গিয়েছে। তাছাড়া প্রশাসনের সকল মহল কঠোর অবস্থানে থেকে নজরদারি রাখার পাশাপাশি প্রতিটি পূজা মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা আওতা ভুক্ত করার জন্য কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এবছরের শারদীয় দুর্গা উৎসব সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *