পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই অস্ত্রোপচার; মৃত্যুশয্যায় প্রসূতি !

মোঃ আশরাফুল ইসলাম,জেলা প্রতিনিধি,মানিকগঞ্জ.

মানিকগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরিক্ষা ছাড়াই অপারেশন করার পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন ইতি আক্তার (২৮) নামের একজন প্রসূতি। তিনি শিবালয় উপজেলার দড়িকয়রা গ্রামের আবুল বাশারের স্ত্রী।
জানা গেছে, গত রবিবার (০২ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে সিজার অপরেশনের উদ্দেশ্যে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের জয়রা রোড এলাকার “আল-মদিনা জেনারেল হাসপাতালে” ভর্তি হন ইতি আক্তার। এর কিছুক্ষণ পর দুপুর দেড়টার দিকে তড়িঘড়ি করে তার অপারেশন শুরু করেন কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা: ওসমান গনি এবং এনেসথেসিয়া প্রদান করেন মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: গাজী মো: কিবারত আলী।
অপারেশন শেষে নবজাতক শিশুকে রোগীর স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দিলেও দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও ইতি আক্তারকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের না করায় সন্দেহ হয় রোগীর স্বজনদের। তখন তারা জানতে পারেন রোগীর ব্লিডিং বন্ধ না হওয়ায় অনেক রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে দুই ব্যাগ রক্ত দেয়া হয় রোগীকে। তখন রোগীর স্বজনেরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার জানতে চান রোগীর কি সমস্যা হয়েছে ? তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও অপারেশনে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাদের কোন সদুত্তর না দিয়ে ওই দিনই বিকেল ৫টার দিকে নিজেরাই এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে প্রসূতী ইতি আক্তারকে দ্রুত সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে রোগীর পরীক্ষা-নীরিক্ষা বা চিকিৎসা সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র না দিয়েই রোগীকে আইসিইউ ইউনিটে ভর্তি করেন আল-মদিনা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
প্রসূতি ইতি আক্তারের বোন দিপ্তী আক্তার ও বাবা আব্দুল কুদ্দস জানান, রোগীর অবস্থা অনেক খারাপ। এনাম মেডিকেলের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। এখানকার চিকিৎসকরা ইতি আক্তারের বিষয়ে এখনো কোন নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।
প্রসূতি ইতি আক্তারের মামা মো: অকুল উদ্দিন রেজা বলেন, আমার ভাগ্নিকে সব সময় যে ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করিয়েছি সেই ডাক্তার দিয়ে অপারেশন না করিয়ে অন্য ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আমরা এ বিষয়ে সম্মতি না দিলেও হাসপাতালের এমডি আরশেদ আলী বলেছে যে, রোগীর কোন সমস্যা হলে তার সব দায় নিবে সে। এনাম মেডিকেলের ডাক্তাররা আমাদের জানিয়েছে, যন্ত্রপাতিতে ত্রুটি থাকায় অপারেশনের পর রোগীর ব্লিডিং বন্ধ হয়নি। দীর্ঘক্ষণ ব্লিডিংয়ের ফলে রক্ত কমে যাওয়ায় রোগীর কার্ডিয়াক স্ট্রোক হয়েছে। রোগীর অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক, যেকোন কিছু হয়ে যেতে পারে।
আল-মদিনা জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরশেদ আলী বলেন, দুপুর দুইটার দিকে ওসমান গনি স্যার অপারেশন করেছে এবং এনেসথেসিয়া প্রদান করেন ডা: কিবারত আলী। রোগীর অবস্থা একটু খারাপ হওয়ার পর আমরা নিজ দায়িত্বে এ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে এনাম মেডিকেলে নিয়ে গেছি। রোগীর অবস্থা এখন অনেকটাই ভালো।


এ বিষয়ে জানতে ডা: ওসমান গনির মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ইতি আক্তারের বিষয়ে কোন কথা না বলেই ফোন কেটে দেন তিনি।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা: মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, রোগীর লোকজন অফিসিয়ালভাবে লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। অভিযোগ না দিলে আমাদের কিছু করার নেই। আর অফিস টাইমে ডিউটি ফাঁকি দিয়ে বেসরকারি হাসাপতালে অপারেশন করার বিসয়টি দেখবেন কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয়।
কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা: জাকির হোসেন বলেন, সরকারি ডিউটি ফাঁকি দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশন বা চিকিৎসা দেয়ার বিধান নেই। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *